সকলের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার ইচ্ছার কথা বলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, নারী, পুরুষ, শিশু এমনকি সব ধর্মের মানুষ যাতে নিরাপদে থাকে সেই চেষ্টা তাদের থাকবে।
সতের বছর পর দেশে ফিরে ঢাকার তিনশো ফিটে সংবর্ধনা মঞ্চে তারেক রহমান নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার ইচ্ছার কথা যেমন বলেছেন, একইসঙ্গে দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য তার পরিকল্পনার থাকার কথা তুলে ধরেছেন।
মি. রহমান বলেছেন, 'আই হ্যাভ এ প্ল্যান ফর দ্য পিপল অব মাই কান্ট্রি'।
২০০৮ সালে দেশ ছাড়ার পর আজ প্রথম দেশের মাটিতে ফিরলেন তিনি।
প্রায় ১৭ মিনিটের বক্তব্যে তিনি নেতাকর্মীদের ধৈর্য ধরার নির্দেশনাও দিয়েছেন।
এর আগে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে তারেক রহমানকে বহনকারী বিমানটি।
এসময় তাকে স্বাগত জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।
জোবাইদা রহমানের মা ইকবাল মান্দ বানু ফুলের মালা দিয়ে তারেক রহমানকে বরণ করে নেন। সেখান থেকে বেরিয়েই মাটি স্পর্শ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিএনপির মিডিয়া সেল থেকে সম্প্রচার করা একটি লাইভ ভিডিওতে দেখা যায়, বিমানবন্দরের দরজা দিয়ে বেরিয়ে তিনি খোলা একটি অংশে দাঁড়ান। সেখানে ঝুঁকে মাটি ছুঁয়ে দেখেন তিনি। পরে জুতা খুলে কিছুক্ষণ খালি পায়ে দাঁড়ান সেখানে।
বিএনপির মিডিয়া সেল থেকে জানানো হয়, ঢাকায় পৌঁছে বিমানবন্দরে থাকা অবস্থাতেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোন করেন তারেক রহমান। এসময় তাকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
পরে একটি বুলেটপ্রুফ বাসে ঢাকায় পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায়, যেখানে তাকে দলের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা জানানোর আয়োজন করা হয়, সেই মঞ্চের উদ্দেশে রওনা হন মি. রহমান।
এসময় কঠোর নিরাপত্তায় ঘেরা বাসটির সামনের অংশে দাঁড়িয়ে কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নাড়তে দেখা যায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে।
তাকে বহনকারী বাসটি বিমানবন্দর থেকে যে সড়ক দিয়ে পূর্বাচল তিনশ ফিট সড়কের সংবর্ধনাস্থলে যায় তার পুরোটা জুড়েই ছিল নেতাকর্মীদের উপস্থিতি।
বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতির কারণে মাত্র চার কিলোমিটারের সড়ক পেরোতে তিন ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। পুরোটা পথ জুড়ে নানা স্লোগান দিতে থাকেন তার দলের নেতাকর্মীরা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে শুভেচ্ছা জানাতে আগে থেকেই বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী হাজির হন বিমানবন্দর থেকে তিনশ ফিট সড়কে তার সংবর্ধনাস্থলে যাওয়ার পথে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তায় নেতাকর্মীদের ভিড় ঠেলে তাকে বহনকারী বাসটি পৌঁছায় তিনশ ফিটের সংবর্ধনা মঞ্চে, যেখানে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
মঞ্চে উঠে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে হাত উঁচু করে শুভেচ্ছা জানান মি. রহমান। এসময় নানা স্লোগান দিতে থাকেন মঞ্চের আশপাশে উপস্থিত নেতাকর্মীরা।
দলের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি জোট ও শরিক দলের বেশ কয়েক নেতাকেও সভামঞ্চে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। তাদের সঙ্গেও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন মি. রহমান।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্যের পর নিজের বক্তব্য শুরু করেন তারেক রহমান।
দলের নেতাকর্মী এবং দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বক্তব্য শুরু করেন তিনি।
দেশের জন্য 'পরিকল্পনা' আছে জানিয়ে তিনি তার বক্তব্যে বারবার দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়টি তিনি তুলে ধরেছেন, বলেছেন, "যেকোনো মূল্যে উসকানির মুখে শান্ত থাকতে হবে। আমরা দেশে শান্তি চাই"।
এসময় মার্কিন অধিকারকর্মী মার্টিন লুথার কিংয়ের কথা 'আই হ্যাভ আ ড্রিমের' উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, "দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য আমার পরিকল্পনা আছে"।
বক্তব্যের শেষে তিনি আবার বলেন, "উই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান"। তবে তার পরিকল্পনায় কী আছে সেব্যাপারে তিনি কিছু বলেননি।
তারেক রহমান তার বক্তব্যে বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধ, ১৯৭৫ সালের সিপাহী বিপ্লব, '৯০-র স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।
ধর্ম, শ্রেণি, পেশা, বয়স, লিঙ্গ নির্বিশেষে দেশের সবার জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানান তিনি।
"আমরা যেকোনো ধর্ম, শ্রেণি, দলের মানুষ হই - আমাদের নিশ্চিত করতে হবে আমরা শান্তি শৃঙ্খলা ধরে রাখবো। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যেন মানুষ নিরাপদে থাকতে পারে, যেন যেকোনো শ্রেণি, পেশা, ধরের মানুষ নিরাপদ থাকতে পারে," বলেন তিনি।
তারেক রহমান আরো বলেছেন, বাংলাদেশের যে কোনো মানুষ নিরাপদ থাকুক এটাই তার চাওয়া।
সব বিশৃঙ্খলা পরিহার করে দেশ গঠনে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
বলেন, তরুণ প্রজন্মের সদস্যদেরকেই আগামীতে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব নিতে হবে। "এদেশে পাহাড়ের মানুষ আছে, সমতলের মানুষ আছে, সব ধর্মের মানুষ মিলে একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই," বলেন মি. রহমান।
নিজের বক্তব্যে দৃর্বৃত্তের গুলিতে নিহত ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদিকে স্মরণ করেন মি. রহমান।
"ওসমান হাদি শহিদ হয়েছে। সে চেয়েছিল এই দেশের মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পাক। শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ করতে প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়ে তুলবো আমরা।"
দেশকে শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাড় করানোর বার্তা দিয়ে মি. রাহমান বলেন, বিভিন্ন আধিপত্যবাদ শক্তির ষড়যন্ত্র এখনো সক্রিয় রয়েছে। সবাইকে আরো ধৈর্যশীল হওয়ার জন্য তিনি এ সময় আহ্বান জানান।
"সবাই মিলে করবো কাজ, গড়বো মোদের বাংলাদেশ" স্লোগান দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন মি. রহমান।
(বিবিসি বাংলা০